২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে গঠিত হবে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই কমিশনের অধীনেই হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের। এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে। নতুন নির্বাচন কমিশনার গঠন নিয়ে ইসি সচিবালয়ে চলছে নানা আলাপ-আলোচনা। কেমন কমিশন আসবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই একাদশ সংসদ নির্বাচন চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। এ ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। তাই ইসি ২০১৮ সালের নভেম্বরের শুরুতে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজও করছে। এমনকি আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির কাজও হাতে নেওয়া হচ্ছে। সব উপজেলায় দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন অফিসার। সেই সঙ্গে কর্মকর্তাদের মনোবল ধরে রাখতে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে মাঠ কর্মকর্তাদের। সে অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন জেলা-উপজেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে তাদেরও ভোটার করার জন্য আগাম তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি। এ ক্ষেত্রে ভোটার তালিকার কাজও অনেকটা এগিয়ে থাকছে।
একজন নির্বাচন কমিশনার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা বিদায় নিচ্ছি। সরকার হয়তো দ্রুত নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। নতুন নির্বাচন কমিশন এসেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরাও একাদশ নির্বাচনের জন্য কিছু সুপারিশ রেখে যাব, যা নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য অনেক কাজে আসবে।’
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হবে সরকার গঠন। সরকার গঠনের পর ওই সংসদ ও সরকার জাঁকজমকভাবে ২০২১ সালে পালন করবে বাংলাদেশের ৫০তম জন্মদিন। এ জন্য এখন থেকেই নানা ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ পায়। সে অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করা হয়। এ ছাড়া দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি। সেই হিসাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে, তথা মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে।
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। বিধান অনুযায়ী নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সেই হিসাবে ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে কমিশন। একাদশ সংসদ নির্বাচনও হবে এ নিয়মেই।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত ন্যূনতম ৩৮ দিন সময় হাতে রেখে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিল ১০-১২ দিন, যাচাই-বাছাই দুই দিন করে চার দিন, প্রত্যাহারের সময় সাত দিন ও প্রচারণার জন্য ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সাধারণত ৪০-৫০ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করে। সেই হিসাবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষে একাদশ নির্বাচন করতে নভেম্বরের শুরুতে বা মাঝামাঝিতে তফসিল দিতে হবে। ডিসেম্বরের শুরুতে বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়। তাই ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট গ্রহণ হতে পারে।
এর আগে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম সময় ৪২ দিনে ভোট হয় অষ্টম সংসদ নির্বাচনে। তবে ষষ্ঠ ও নবম সংসদ নির্বাচনে ৪৭ দিন সময় দিলেও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তিনবার পুনঃ তফসিল হয়। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ৩৮ দিনের কম সময় দেওয়া সম্ভব নয়। গত ১০টি সংসদ নির্বাচনে ভোটের জন্য সর্বোচ্চ ৭৮ দিন ও সর্বনিম্ন ৪২ দিন রেখে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কখনো কখনো পুনঃ তফসিলও করা হয়। এ ক্ষেত্রে ৩৭ থেকে ৩৯ দিন পর্যন্ত সময় রাখা হয়।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন
বর্তমান ইসি নিয়োগের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি। ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সংলাপে ২৩টি দল অংশ নেয়। এরপর জানুয়ারিতে গঠন করা হয় সার্চ কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হয় বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রকিবউদ্দীন কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। সংবিধানে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আইন করার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো আইন হয়নি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারও ইসি সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন আইন প্রণয়নের কোনো পরিকল্পনা নেই। আগের মতোই সার্চ কমিটি গঠন হতে পারে। তবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন রাষ্ট্রপতি।- বাংলাদেশ প্রতিদিন ।
পাঠকের মতামত: